
প্রকাশিত: Tue, Feb 14, 2023 4:37 PM আপডেট: Fri, Jun 27, 2025 2:03 AM
সাহিত্যিক ও সম্ভ্রান্তদের সঙ্গে যৌনসম্পর্ক
শোয়েব সর্বনাম : সেলিব্রেটিদের লগে ওইসব করে টরে পরে বইতে সবকিছু লিখে দেওয়ার চর্চা উনিশ শতকেই শুরু করে সেই সময়ের বারবণিতারা। বাংলার নবজাগরণের আদি পুরুষ রাজা রামমোহন রায়, বিষাদ সিন্ধুর লেখক মীর মশাররফ হোসেন, ঠাকুর পরিবারের প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর, হাছন রাজার জ্যেষ্ঠপুত্র বানিউর রাজা, বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় লেখকদের শিরোমনি শরৎচন্দ্রের চট্টোপাধ্যায় কিংবা লাজুক ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত লেখক জগদীশ গুপ্তের গণিকাগমনের গল্প এইভাবে ফাঁস হয়ে যায়। বেস্টসেলার শরৎচন্দ্রের ওইসব করাকরি নিয়ে তার গণিকার লেখা বইটাও বেস্টসেলার হইছিল। এ অঞ্চলের বিখ্যাত বেশ কয়েকটি পতিতালয়ে এইসকল সেলিব্রেটিদের প্রত্যেকের নিজস্ব ঘর ছিলো। গণিকালয়ে মাসে ৩২ টাকা দিয়ে একটা ঘর ভাড়া নেয়ার পর সেখানে খেমটাওয়ালী মাগীর জন্য বেতন হিসেবে ২০ টাকা, ধোপার খরচ ১২ টাকা, পান ও অন্যান্য বিলাসীদ্রব্যের জন্য ২ টাকা ইত্যাদি বিস্তারিত মাসিক ৮৭ টাকার একটা বাজেট মীর মশাররফের ব্যক্তিগত ডায়রি থেকে পাওয়া যায়। বই লিখে তখনকার বারবনিতাদের কেউ কেউ জনপ্রিয়তা, আর্থিক প্রতিষ্ঠা ও সামাজিক মর্যাদাও পেয়েছিলেন।
তারা সাহিত্যিক ও সম্ভ্রান্তদের সাথে যৌনসম্পর্কের সুযোগে অন্যান্য অন্তরঙ্গ মুহূর্তের অনেক গল্প জেনে যেতেন। ক্রিয়েটিভরাও তো মিথ্যুক, অনেক আবজাব বলে থাকে তারা। উনিশ শতকের কথা বলতেছি আমি, যখন কেউ মেট্টিক পাস করলে সারা গ্রামের লোকেরা তারে নিয়ে মাথায় তুলে নাচতো, সেইসময়ের কিছু বারবণিতা নিজ উদ্যোগে পড়ালেখা শিখে বই লিখে সকলের গোপন কাহিনি ফাঁস করে দিচ্ছে, ব্যাপারটা বেশ বিস্ময়কর। তখন নারী শিক্ষার ব্যাপারটা একটু কঠিনই ছিল এভারেজ নারীদের জন্য, বেগম রোকেয়া তাদের জন্য মুভমেন্ট করে বেড়াচ্ছেন। তবে বারবণিতাদের জন্য ব্যপারটা অত কঠিন ছিল না, যেহেতু মেলামেশার রেস্ট্রিকশন তাদের নাই। এই শিক্ষিত বারবণিতারা শুধু সত্য ঘটনা লিখত ব্যাপারটা এমন না, অনেক বিখ্যাত সাহিত্যিক বুদ্ধিজীদের নিয়ে বানায় বানায় মিথ্যা কথাও লিখে ফেলছে তারা। কিছু ঘটনা পরে আদালত পর্যন্ত গড়ায়। এই ধরনের কয়েকটি বইয়ের নাম দেয়া যেতে পারে। বিখ্যাত অভিনয়শিল্পী নটী বিনোদিনীর লেখা বই আমার কথা (১৩১৯), মানদা দেবীর লেখা বই শিক্ষিত পতিতার আত্মচরিত (১৩৩৬), রমেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের লেখা বই ব্যভিচারী রমেশদার আত্মকথা (তারিখবিহীন), অভিনেত্রী সুকুমারী দত্তের লেখা আত্মজৈবনিক নাটক অপূর্ববসতী নাটক (১২৮২)।
এই বইগুলার তথ্য ভুল প্রমাণ করেও অনেক অনেক বই লেখা হইছে, মামলায় হারজিত হইছে, এলিটরা আত্মপক্ষ সমর্থনে ওইসব বইগুলা লিখতে বাধ্য হইছিলেন তখন। গবেষক আবুল আহসান চৌধুরী এই বইগুলো খুঁজে বের করে একসঙ্গে করে একটা বই করছেন, বইমেলায় পাওয়া যায়। অবিদ্যার অন্তঃপুরে নামে এই বইটার প্রকাশক প্রথমা। বেশ কয়েকবছর আগে আমি কিনছিলাম বইটা ৪০০ টাকা ছিল তখন দাম। বইটাতে গবেষক অনেক বিখ্যাত সাহিত্যিক ও এলিটদের ব্যক্তিগত ডায়রি, পত্রপত্রিকায় প্রাসঙ্গিক লেখালেখি ও অন্যান্য নথিপত্র হাজির একটা বিস্তারিত যৌনপরিস্থিতি তুলে ধরছেন। গবেষক আবুল আহসান চৌধুরী কুস্টিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন, বাংলায় লালন নিয়ে সবচেয়ে বিশ্বস্ত গবেষণাটাও তার করা। ইন্টেলেকচুয়ালমার্কা নাম থাকার কারণে বইটা পপুলার হয় নাই। অবিদ্যা শব্দটার অর্থ যে পতিতা, এই তথ্য হুমায়ূন আহমেদও জানতেন না সাধারণ পাঠক জানবে কোনখান থেকে। আগ্রহী পাঠকরা বইটা পড়তে পারেন। স্পেশালি, বিখ্যাত লোকেদের সাহিত্য বা সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের চেয়েও যৌনকর্ম নিয়ে যাদের আগ্রহ বেশি, তাদের জন্য এই বইটার বিজ্ঞাপন করা গেলো। লেখক: কথাসাহিত্যিক
আরও সংবাদ
চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে
‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!
কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!
সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি
ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
মতিউর প্রতিদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৮৩ ব্যাচের বন্ধুদের গ্রুপে সৎ জীবন যাপনের উপদেশ দিতেন!

চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে

‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!

কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!

সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি

ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
